বাংলাদেশে ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করা বেশ লাভজনক হতে পারে, যদি সঠিক শিল্প ও পরিকল্পনা নির্বাচন করা হয়। নিচে বিস্তারিত গাইড দেওয়া হলো—
১. সঠিক খাত নির্বাচন করুন
প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিন কোন খাতে ডিলারশিপ ব্যবসা করবেন। বাংলাদেশে কিছু জনপ্রিয় ও লাভজনক ডিলারশিপ ব্যবসা হলো:
- অটোমোবাইল ডিলারশিপ (গাড়ি, মোটরসাইকেল, ট্রাক, ইলেকট্রিক ভেহিকল)
- ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল ডিলারশিপ (স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, টিভি, রেফ্রিজারেটর)
- এফএমসিজি (FMCG) পণ্য ডিলারশিপ (খাদ্যপণ্য, পানীয়, কসমেটিক্স)
- ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেডিকেল সরঞ্জাম ডিলারশিপ
- নির্মাণ সামগ্রী ও হার্ডওয়্যার ডিলারশিপ (সিমেন্ট, স্টিল, টাইলস, রং)
- কৃষি পণ্য ডিলারশিপ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি)
সঠিক বাজার বিশ্লেষণ করে চাহিদা ও প্রতিযোগিতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
২. লাইসেন্স ও ব্যবসায়িক অনুমোদন
বাংলাদেশে ডিলারশিপ ব্যবসা করতে হলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়—
(A) ব্যবসায়িক নিবন্ধন:
- ট্রেড লাইসেন্স: স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করুন।
- কোম্পানি নিবন্ধন: যদি বড় আকারে ব্যবসা করতে চান, তাহলে—
- সিঙ্গেল প্রোপ্রাইটরশিপ (একক মালিকানা)
- পার্টনারশিপ ফার্ম (অংশীদারি ব্যবসা)
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Ltd.) (আরজেএসসি-তে নিবন্ধন)
- ভ্যাট ও ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন (TIN & BIN): জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে সংগ্রহ করুন।
(B) ডিলারশিপ চুক্তি ও অনুমোদন:
- কোম্পানির সাথে ডিলারশিপ চুক্তি করুন যাতে পণ্য সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ ও কমিশন সংক্রান্ত বিষয় স্পষ্ট থাকে।
- কিছু শিল্পের জন্য আলাদা অনুমোদন দরকার (যেমন, ওষুধের জন্য ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে অনুমোদন দরকার)।
৩. সরবরাহকারী খুঁজুন ও চুক্তি করুন
- প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করুন যারা বাংলাদেশে ডিলারশিপ দেয়।
- দাম ও কমিশনের দরকষাকষি করুন যেন লাভজনক মার্জিন থাকে।
- ক্রেডিট সুবিধা আছে কিনা দেখুন, অনেক কোম্পানি বকেয়া অর্থ পরিশোধের সুযোগ দেয়।
বিভিন্ন ট্রেড ফেয়ার, বিজনেস ওয়েবসাইট ও সরাসরি কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে সরবরাহকারী খুঁজতে পারেন।
৪. বিনিয়োগের ব্যবস্থা করুন
ডিলারশিপ ব্যবসার জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রয়োজন—
- ছোট ব্যবসার জন্য: ৫–১০ লাখ টাকা
- বড় ডিলারশিপ (যেমন, গাড়ি বা ইলেকট্রনিক্স): ৫০ লাখ–৫ কোটি বা তার বেশি
- ব্যাংক লোন, এসএমই লোন বা বিনিয়োগকারীদের সাথে চুক্তি করতে পারেন।
৫. জায়গা ঠিক করা ও স্টক ম্যানেজমেন্ট
- উপযুক্ত লোকেশন বাছাই করুন, যেখানে পণ্যের চাহিদা বেশি।
- গুদাম ও শোরুম তৈরি করুন, যেন পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ রাখা যায়।
- সঠিক স্টক ম্যানেজমেন্ট করুন, যেন সরবরাহে সমস্যা না হয়।
৬. মার্কেটিং ও বিক্রয় কৌশল
গ্রাহক আকর্ষণ করতে এবং ব্যবসা বাড়াতে—
✅ সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল মার্কেটিং করুন (Facebook, YouTube, TikTok Ads)
✅ স্থানীয়ভাবে প্রচার করুন (ব্যানার, লিফলেট, অফলাইন ইভেন্ট)
✅ রিটেইলারদের সাথে পার্টনারশিপ করুন (পণ্য আরও বেশি দোকানে পৌঁছাতে)
✅ গ্রাহকসেবা ও ডিসকাউন্ট দিন (ভালো সার্ভিস দিলে দীর্ঘমেয়াদি কাস্টমার পাওয়া যাবে)
৭. লজিস্টিক ও অপারেশন ম্যানেজমেন্ট
- ডেলিভারি ও সরবরাহ ঠিক রাখুন, যেন দ্রুত পণ্য পৌঁছায়।
- কাস্টমার সাপোর্ট দিন, গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান করুন।
- ভবিষ্যতে ব্যবসা বাড়ান, অন্য অঞ্চলে নতুন ডিলারশিপ নিন বা ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে কাজ করুন।